প্রবাসে মৃত্যু বরণ করলে মৃত দেহ কিভাবে দেশে আনতে হবেপৃথিবীর প্রায় ১৬০টি দেশে আমাদের ১ কোটি সম্মানিত প্রবাসী কর্মী রয়েছেন। হায়াত-মৌত আমাদের হাতে নেই, যে কারও যে কোন সময় মৃত্যু হতে পারে। এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিছু জিনিষ জেনে রাখা আবশ্যক..
মৃতদেহ দেশে আনয়নঃবিদেশী কর্মীর মৃতদেহ দেশে প্রেরণের জন্য প্রত্যেক দেশের নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন আছে। অনেক দেশেই সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কিছু এজেন্সি কাজটি করে থাকে। নিয়োগকারী কোম্পানী বা মৃতের স্বজন বা বাংলাদেশ এম্বেসীর চাহিদার প্রেক্ষিতে তারা কাগজপত্র প্রসেস করে মৃতদেহ বিমানে তুলে দেয়।
বাংলাদেশ এম্বেসীর শ্রম উইং (শ্রম উইং না থাকলে, কনস্যুলার উইং) ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। সার্টিফিকেটে মৃতব্যক্তি বাংলাদেশী কর্মী কিনা, বৈধ কিংবা অবৈধ কিনা ইত্যাদিসহ বিমানবন্দরে মৃতদেহ রিসিভারের নাম উল্লেখ থাকে।
বিমানভাড়া এবং প্রসেসিং ব্যয়ঃ
সাধারণতঃ এই ব্যয় নিয়োগকারী কোম্পানী/ব্যক্তি বহন করে থাকে। অবৈধতার কারণ দেখিয়ে নিয়োগকর্তা ব্যয় বহনে অপারগতা প্রকাশ করলে, আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবকে এই ব্যয় বহন করতে হয়। এ ধরনের ব্যবস্থাও না করা গেলে শ্রম উইংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড ব্যয়ভার বহন করে থাকে। তবে যে-ই বহন করুক না কেন, শ্রম উইংকেই সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে হয়।
বিমানবন্দরে মৃতদেহ গ্রহণঃ
শ্রম উইং থেকে প্রদত্ত ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটে মৃতদেহ গ্রহণকারীর নাম উল্লেখ থাকে। রিসিভার বিষয়টি আগেই জেনে থাকেন। তবুও ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের পক্ষ থেকেও মৃতের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে জানানোর চেষ্টা করা হয়। নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরের কার্গোগেইটে রিসিভারের ভোটার আইডি/পাসপোর্টের ফটোকপি ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিয়ে মৃতদেহ গ্রহণ করতে হয়। পাশাপাশি, মৃতদেহের সাথে প্রেরিত ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, ডেথ সার্টিফিকেট ও এয়ারওয়ে বিলসহ যাবতীয় কাগজপত্র বুঝে নিতে হয়।
বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে মৃতদেহ পরিবহন ও দাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা অনুদান গ্রহণঃ
বৈধ বা অবৈধ যে কোন বাংলাদেশী কর্মীর ওয়ারিশই এই অনুদান পাবেন।
কার্গোগেইটে মৃতদেহ গ্রহণের পর মৃতদেহ গাড়িতে রেখে কাগজপত্রগুলো নিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে যেতে হবে। গৃহীত কাগজপত্র সেখানে জমা দিতে হবে। অতিরিক্ত হিসেবে রিসিভারের ভোটার আইডির ফটোকপি, এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ওয়ারিশান সনদ জমা দিয়ে চেক গ্রহণ করতে হবে।
রিসিভার যদি মৃতের মূল ওয়ারিশ (স্ত্রী, পিতা, সন্তান) ছাড়া অন্য কেউ হন, সেক্ষেত্রে চেক গ্রহণের জন্য ক্ষমতা পত্রের প্রয়োজন হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না এনে থাকলে, পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে যে কোন সময় কাগজপত্রসহ এসে চেক নিয়ে যেতে হবে।
ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ লক্ষ টাকার অনুদানঃ
যেসব কর্মী বৈধভাবে বিদেশ গিয়েছিলেন, তাদের সবার জন্য এটি প্রযোজ্য। বৈধভাবে বিদেশ গিয়ে পববর্তীতে অবৈধ হলেও পাবেন। এ ক্ষেত্রে মূলতঃ বহির্গমন রেকর্ড দেখা হয়। বহির্গমন বৈধ হলেই তাঁর ওয়ারিশ এ ক্ষতিপূরণ পাবেন।
এ জন্য সাধারণতঃ পৃথকভাবে আবেদন করতে হয়না। মৃতদেহ পরিবহন ও দাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকার চেক গ্রহণের সময় যে কাগজগুলো জমা দিতে হয় বা দেখাতে হয়, সেগুলোর কপি প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে ঐ দিনই ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডে অনলাইনে প্রেরণ করা হয়। কল্যাণ বোর্ড মৃতের বহির্গমন বৈধতা যাচাই অন্তে সঠিক পেলে স্থানীয় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে ওয়ারিশান ও বন্টননামাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে তিন লাখ টাকার চেক স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে মৃতের ওয়ারিশকে প্রেরণ করে থাকে।
** এই প্রসেস না-জানা থাকার কারণে কেউ অনুদান গ্রহণ না করে থাকলে, তিনমাসের মধ্যে বিমানবন্দরস্থ প্রবাসী কল্যাণ থেকে ৩৫ হাজার টাকার চেক গ্রহণ করতে পারবেন এবং যথানিয়মে তিন লক্ষ টাকার অনুদানের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। তিন মাস পার হয়ে গেলে প্রথম থেকে মোট এক বছরের মধ্যে স্থানীয় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক বরাবর ওয়ারিশ কর্তৃক উভয় অনুদানের জন্য আবেদন করতে হবে।
Nice post
ReplyDelete