Saturday, 11 November 2017

পুলিশের নির্যাতন থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে !

পুলিশের নির্যাতন থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে !

 তল্লাশির নামে পুলিশি হয়রানি, নির্যাতন, দুর্ব্যবহার ও সামারি বাণিজ্য কোনোভাবেই থামছে না। পুলিশকে বলা হয়ে থাকে জনগনের বন্ধু। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কিত কিছু ঘটনায় পুলিশের সেই ভাবমূর্তি ম্লান হয়ে উঠেছে।

১) সন্দেহবশত যদি আপনাকে গ্রেপ্তার করা হয়- জেনে নিন, ২৪ ঘন্টার বেশি আপনাকে আটক করে রাখার উপায় নেই। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে দ্রুত কোন আত্মীয়কে থানায় আসতে বলুন। অনেক সময় দেখা যায় বখাটেদের সাথে সাথে ওখানের নিরীহ ছেলেও ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় যদি থানায় এসে লিখিত দিতে পারে যে ধৃত ব্যক্তি তাঁর সাথে সম্পর্কিত, এবং সে যা পরিচয় দিচ্ছে সেটি সঠিক- এক্ষেত্রে আপনি ছাড়া পেয়ে যাবেন।
২) ধরে আনার কাজটা মূলত করে কন্সটেবল থেকে এস-আই পর্যায়ের অফিসারেরা। একটি থানায় তাদের নেতা হচ্ছেন ওসি। আপনি যদি ওসির সাথে ( ওসি না থাকলে ইন্সপেক্টর-তদন্ত সাহেব) সরাসরি দেখা করে বা যোগাযোগ করে আপনার আত্মীয়ের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে পারেন সেক্ষেত্রেও বিপদ কেটে যাবার কথা।
৩) এবার সবচাইতে স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলি। পুলিশ কর্তৃক নিরীহ মানুষকে আটক করে হয়রানির ভয় দেখিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগ খুব কমন এবং প্রচলিত। এসব ক্ষেত্রে যেটা হয়, ওই অসৎ অফিসার আপনাকে ভয় দেখান এবং আপনিও ভয়ে তার কথামত কাজ করেন।
এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ, আপনি যে এলাকার বাসিন্দা সে এলাকার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার/এসপি/সহকারী পুলিশ কমিশনার/ এএসপি – এঁদের ফোন নম্বর অবশ্যই ফোনে সেইভ করে রাখুন।আপনি যদি বিনা কারণে আটক হন এবং আপনি নিজে বা আপনার কোন আত্মীয় যদি এই সিনিয়র অফিসারদেরকে ফোনে জানাতে পারেন- তিনি অবশ্যই খোঁজ নেবেন ব্যাপারটি কি সেটা জানতে। এঁদের কাছ থেকেও আপনি সহায়তা পেতে পারেন।
৪) ধরে নিচ্ছি উপরের কোন স্টেপেই কোন কাজ হলনা, আপনি ওই অসৎ অফিসারের পাল্লায় পড়ে হয়রানির শিকার হলেন। এক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য হচ্ছে ছাড়া পাবার পর পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সহ লিখিত আকারে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এলাকার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার( মেট্রোপলিটন এলাকায় হলে) বা এসপি (জেলাতে) স্যার বরাবর পাঠানো।
প্রয়োজনে আপনি সহকারী পুলিশ সুপার/ এডিশনাল এসপি এমনকী প্রয়োজনে এসপি/ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার স্যারের সাথেও দেখা করতে পারেন। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে ধাপে ধাপে স্বয়ং পুলিশ প্রধানের সাথে দেখা করার অধিকারও আপনার আছে। প্রয়োজন পড়লে এটি প্রয়োগ করুন।
৫)  যে কাজটি করা থেকে বিরত থাকতে বারংবার অনুরোধ জানাচ্ছি সেটি হচ্ছে, বিপদ কেটে যাবার পর অন্যায়টিকে “হজম” করে ফেলা। ঘুষ দেয়া এবং ঘুষ নেয়া সমান অপরাধ- মাত্র ১০০/২০০ টাকা দিয়ে “ঝামেলা” এড়াতে এড়াতে আমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গিয়েছি, যথাস্থানে নালিশ জানাতে অস্বীকার করছি। আমরা যেটা করি তা হচ্ছে, ওই ২০০/৩০০ টাকা ঘুষ বিনা প্রতিবাদে দিয়ে দিই, তারপর ফেইসবুকে পুলিশের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করি- যাতে মানসিক তৃপ্তি হলেও কাজের কাজ কিচ্ছু হয়না।
আপনার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ওই ঘুষখোরের কিচ্ছু যায় আসে না। বরং আপনি যদি সুকৌশলে ওর নেমপ্লেট আর কাঁধের ব্যাজ-এ কয়টা দাগ আছে দেখে নিতেন( অথবা সুযোগ পেয়ে মোবাইলে ভিডিও/ছবি তুলে নিতেন)- এরপর সেগুলো দিয়ে তার উপর মহলে( ওসি ও তদোর্ধ্ব) নালিশ জানাতেন, তাতে ও ওই অপকর্মটি করার আগে দুইবার চিন্তা করত। ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ হলে বুকে থাকা নামটি দেখে নিন( সিভিল হলে নাম,পদ,তার থানা বা ইউনিট জেনে নিন), পুলিশের কয়জন সৎ বড কর্তার নাম মনে রাখুন (সংশ্লিষ্ট এলাকার এসি, এডিসি ক্রাইম,ডিসি/এ এস পি,এডিশনাল এসপি,এসপি)।পুলিশ অন্যায়ভাবে হয়রানি করলে আপনি উপরোক্ত যে কোন একজন অফিসারের নাম উল্ল্যেখ করে বলুন যে আপনি লিখিত অভিযোগ করবেন।
পুলিশি নির্যাতনের শিকার হলে সংবাদ মধ্যমকে জানান। অপরাধ প্রবণ পুলিশের মনোবল সব সময় দূর্বল থাকে,তাই আপনি যদি ঠিকভাবে ম্যানেজ করতে পারেন তাহলে সে আপনার সাথে কঠোর হওয়ার সাহস পাবেনা। আইনের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল থাকুন এবং নিজের উপর আস্থা রাখুন। পুলিশ ফোনে টাকা চাইলে সাথে সাথে Record করে নিন। জায়গা জমি সংক্রান্ত কোন কিছুই পুলিশের করার কোন আইনগত অধিকার নেই (শুধু কোর্ট এর আদেশ পালন করতে পারবে)। তবে জমি নিয়ে শান্তি ভঙের আশংকা থাকলে তারা একটি হুশিয়ারি নোটিশ জারি করতে পারে। সুতরাং আপনার জায়গা নিয়ে কিছু করতে চাইলে স্মার্টলি তার সাথে তার এখতিয়ার নিয়ে কথা বলুন।
পুলিশি নির্যাতনের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে বা পুলিশি হয়রানির পর করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ।
‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’ অনুসারে ঘটনা সংশ্লিষ্ট অভিযোগ যে কেউ দাখিল করতে পারবেন। এই আইনের অধীনে ‘অভিযোগকারী’ হতে পারেন অভিযোগ উত্থাপনকারী বা ভুক্তভোগী উভয়ে। ‘ক্ষতিগ্রস্ত অথবা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি’ অর্থ ওই ব্যক্তি যাকে এই আইনের অধীনে তার উপর অথবা তার সংশ্লিষ্ট বা উদ্বিগ্ন এমন কারো উপর নির্যাতন করা হয়েছে।
## অভিযোগ দাখিল করবেন যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পক্ষে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি দায়রা জজ আদালতে অথবা পুলিশ সুপারের নিচে পদস্থ নয় এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কাছে নির্যাতনের অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। অভিযোগ দাখিলের পর পুলিশ সুপার অথবা তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দায়রা জজ আদালতে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন। অভিযোগ দাখিলের পর থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যথায় উপযুক্ত কারণ দেখা দিয়ে অতিরিক্ত আরো ৩০ দিনের মধ্যে অবশ্যই মামলা শেষ করার বিধান রয়েছে।

No comments:

Post a Comment

বিদেশ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া

এই জন্য অন্তত ১ দিনের জন্য হলেও  husband k বাংলাদেশে আসতে হবে বাংলাদেশে এসে  কাজী অথবা একজন আইনজীবীর কাছে যেতে হবে, সেখানে গিয়ে  তার স্ত্...