Saturday, 11 November 2017

আমাদের বিচার ব্যবস্থা, বাস্তবতা ও ভোগান্তি !

একটি প্রবাদ আছে “মানুষ মাত্রই ভূল করে”। ভূল এবং অপরাধের সাথে জড়িত মানবকুলের জন্য পরকালে রয়েছে বিচারের মহা আয়োজন । তবুও অপরাধীদের দমন ও অপরাধ নির্মূলে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রয়েছে আইন ও আদালত। স্ব-স্ব দেশের জাতি, ধর্ম বিবেচনায় দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে গঠন করা হয় আইন। আর আদালতের মাধ্যমে নির্দিষ্ট আইনে বিচার বা মীমাংসা করা হয় বিভিন্ন ধরণের সমস্যা।
বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি ও বিরোধ নিস্পত্তির জন্যই সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন ধরণের আদালত। আমাদের দেশেও প্রচলিত আছে কয়েক প্রকারের আদালত। বিগত ১লা নভেম্বর ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মধ্য দিয়ে প্রতিটি জেলায় বর্তমানে রয়েছে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসী। পূর্বে ফৌজদারী মামলা জেলা প্রশাসনের অধীনের পরিচালিত হতো কিন্তু বর্তমানে সে ক্ষমতা বা মামলা আমলে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর। যদিও এখনো পেনাল কোডের ১০৭/১৪৪/৯৫/১০০ ধারাগুলোর কার্যক্রম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েই পরিচালিত হয়।
এছাড়াও প্রতিটি জেলায় রয়েছে জজ কোর্ট, যাতে আছে সহকারী জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, যুগ্ম দায়রা জজ আদালত, অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত ও জেলা ও দায়রা জজ আদালত। প্রতিটি জেলায় আরো রয়েছে নারী ও শিশু আদালত (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল), মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যূনাল, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যূনাল, বন আদালত এবং পারিবারিক আদালত।
এসব আদালতের সাথে যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে জনসাধারণের চরম ভোগান্তি। যে কোন আদালতে বিভিন্ন সেকশনে গিয়ে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তির সর্বোচ্চ পর্যায়। বাদী হোক আর বিবাদী হোক ভোগান্তি কারো থেকে কারো কম নয়। আমাদের দেশের আইন ও আদালতের এতই বেহাল দশা যে, পেনাল কোডের ৩৭৯ ধারা তথা চুরির মামলার রায় ঘোষণা হতে সময় লাগে কমপে ৫/৭ বছর।
এক দিকে মানুষের মূল্যবান সময়, অপরদিকে গরীবের হাঁস-মুরগি বিক্রয়ের টাকা চলে যাচ্ছে অ্যাডভোকেট, মুহুরী ও আদালতের কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীদের পকেটে। বাস্তব প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, এদেশের বেশির ভাগ গরিব লোকেরাই মামলা-হামলার সাথে জড়িত। যদি প্রশ্ন করা হয় কোন আদালতের কোন খাতে টাকা দরকার হয় না? এই প্রশ্নের কোন উত্তর আদালতপাড়ার লোকজন দিতে পারবেন না।
আদালতে মামলা ফাইলিং করতে, মামলার ফটোকপি বা সহিমূহুরী নকল নিতে অথবা যে কোন দরখাস্ত দিতে আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার), সেরেস্তাদার, পিপি-এপিপি, সিএসআই, জিআরও, পুলিশ ও জারীকারক ও পিয়নকে ধার্য্য মত খরচা-পাতি নামক ঘুষ না দিয়ে কোন উপায় নেই। আদালতের উকিল (অ্যাডভোকেট) ও মুহুরীর ফি নামীয় টাকার কথা বাদই দেওয়া হোক, কারণ তাদের এটা ধার্য্য কৃত বৈধ পারিশ্রমি।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রতিটি বেঞ্চেই রয়েছে কাঁচা টাকার ঝনঝনানি। জানা মতে, অনেক আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) বা জিআরও সহ বহু কর্মচারী রীতিমত দুই/চারজন বিচারক কেনার (আর্থিক দিক থেকে) মতা রাখেন! পত্রিকায় প্রায় আমরা দেখতে পাই, দূর্ণীতি দমন কমিশনেও দূর্নীতি। তাহলে কার কাছে বিচার দেব? কে করবে ন্যায়বিচার? কিন্তু আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের কি অবস্থা ? খাওয়া-পরার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয় আদালতের পেছনে, এমনকি না খেয়ে থাকলেও আদালতের ফি যোগাড় করেই মামলা পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু টাকা না হয় গেল, মানুষের সময়ের কি কোন মূল্য নেই। স্বল্পায়ু দেশের মানুষ হিসেবে একটি চুরির মামলার বিচার নিষ্পত্তি হতে যদি ৮/১০ বছর লাগে, তাহলে এই আইন বা আদালতের কাছে মানুষ কি আশা করতে পারে???

No comments:

Post a Comment

বিদেশ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া

এই জন্য অন্তত ১ দিনের জন্য হলেও  husband k বাংলাদেশে আসতে হবে বাংলাদেশে এসে  কাজী অথবা একজন আইনজীবীর কাছে যেতে হবে, সেখানে গিয়ে  তার স্ত্...