Saturday, 11 November 2017

কালো টাকা কি? কালো টাকা কি ভাবে সাদা করা হয়?

সাধারণভাবে কালো টাকা বলতে এমন টাকাকে বুঝানো হয় যার উৎস বৈধ বা আইনসম্মত নয়। ঘুষ, দুর্নীতি, কালোবাজারি, চোরাকারবার, মাদক ও অস্ত্রসহ নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থ হচ্ছে কালো টাকা।
তবে আয়কর আইন অনুসারে বৈধ উৎস থেকে অর্জিত অর্থও কালো হতে পারে, যদি টাকার মালিক তার আয়কর বিবরণীতে তার উল্লেখ না করেন, ওই টাকা করযোগ্য হলেও কর না দেন। অবশ্য আয়কর আইনে  কালো টাকা বলতে কিছু নেই। আইনের কোথাও এ শব্দটির উল্লেখ নেই। সেখানে অপ্রদর্শিত অর্থের উল্লেখ আছে। আয়ের যে অংশ আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শন করা হয় না, তা-ই অপ্রদর্শিত অর্থ  ( Un-disclosed Money); সাধারণভাবে যা কালো টাকা নামে পরিচিত।

তবে কেউ কেউ কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থের মধ্যে একটা স্পষ্ট সীমারেখা টানার পক্ষে। তাদের মতে, অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস বৈধ হতে পারে, আবার অবৈধও হতে পারে। কিন্ত কালো টাকার উৎস নিশ্চিতভাবেই অবৈধ। তাই বৈধ অপ্রদর্শিত অর্থের সঙ্গে কালো টাকাকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়।
তাদের মতে, নানা কারণে বৈধ অর্থও অপ্রদর্শিত থেকে যেতে পারে, এটি যেমন ইচ্ছাকৃত হতে পারে, তেমনই আইনি জটিলতার কারণেও হতে পারে। ধরা যাক, একজন ব্যবসায়ী কর ফাঁকি দেওয়ার অসাধু উদ্দেশ্য থেকে তার বার্ষিক আয়ের একটা অংশ চেপে গেছেন, আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করেন নি। এ ক্ষেত্র উল্লেখ না করা ওই অর্থ বাস্তবে অপ্রদর্শিত অর্থ। এটা ইচ্ছাকৃত।
আবার একজন ব্যাক্তি হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অথবা আগে কিনে রাখা এক খন্ড জমি বিক্রি করেছেন। কিন্তু আইনী জটিলতায় পুরো অর্থ আয়কর বিবরণীতে দেখাতে পারেন নি। কারণ ভূমি অধিদপ্তর বিভিন্ন এলাকায় জমির একটি দর নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে। তাই চাইলেও জমি বিক্রির দলিলে তার বেশি মূল্য উল্লেখ করা যায় না। তাই প্রকৃত বিক্রয় মূল্যের চেয়ে কম মূল্য উল্লেখ করতে হয়। এমন পরিস্থিতি বিক্রয় মূল্যের বাকী অংশ আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করা যায় না। এভাবেও বৈধ পথে উপার্জিত টাকা অপ্রদর্শিত থেকে যায়।

আয়কর অধ্যাদেশের কিছুটা পরিবর্তন করেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো করদাতার ফাঁকি দেওয়া অর্থ বা গোপন করা আয় শুধু ধরা পড়লেই জরিমানাসহ তা বৈধ করার সুযোগ ছিল। নিয়মানুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি পাঁচ বছর আগে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বার্ষিক আয়কর বিবরণীতে ঘোষণা না দিয়ে গোপন করেন এবং সেই গোপন করা অর্থ যদি কর কর্মকর্তারা চিহ্নিত করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে পাঁচ বছর আগের কর হারের সঙ্গে প্রতিবছরের জন্য ১০ শতাংশ করে জরিমানা দিয়ে সমপরিমান অর্থ বৈধ করতে পারবেন। সাধারণভাবে এটি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ হিসেবে পরিচিত এবং তিনটি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে এই অর্থ বৈধ করার সুযোগ বর্তমান অর্থবছরে দেয়া হয়েছিলো৻
নতুন শিল্প স্থাপন, শেয়ার বাজার এবং আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের মাধ্যমে তা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল চলতি বছরের বাজেটে।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সরকার বলেছিল যে এই টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় ফিরে এলে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হবে।
স্বাধীনতার পর প্রতিটি সরকার এসেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু খুব একটা কাজ হয়নি, খুব বেশি কালোটাকা সাদাও হয়নি।

No comments:

Post a Comment

বিদেশ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া

এই জন্য অন্তত ১ দিনের জন্য হলেও  husband k বাংলাদেশে আসতে হবে বাংলাদেশে এসে  কাজী অথবা একজন আইনজীবীর কাছে যেতে হবে, সেখানে গিয়ে  তার স্ত্...